বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে, তীব্র রাজনৈতিক বিরোধিতার মাঝেও হুদা কমিশনের মাধ্যমে দেড় লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা হয়েছিল। এই প্রকল্পে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় এবং তখন বলা হয়েছিল যে, ইভিএমগুলো ১০ বছর কোনো ঝামেলা ছাড়াই চলবে। তবে, আশ্চর্যের বিষয়, মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই এক লাখ মেশিনই নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা এখন এ প্রকল্পে নয় ছয় নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইভিএম প্রকল্পটি ছিল বিতর্কিত। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহৃত হয়, যদিও বিভিন্ন কেন্দ্রে তা নিয়ে নানা অসঙ্গতি দেখা যায়। ২০১৭ সালে ১১০০ সেট ইভিএমে ত্রুটি দেখা দিলে তা বাতিল করে দেওয়া হয়, এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় সংস্করণ আনে কমিশন। এরপর রংপুর সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হয়, তবে ত্রুটির কারণে সেই মেশিনগুলোও বাতিল করা হয়।
২০১৮ সালে নুরুল হুদা কমিশন ৪ হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে, যার আওতায় দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়। কিন্তু ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এর মধ্যে এক লাখ মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কিছু মনে করতে পারেননি, তবে তিনি বলেছিলেন যে, এটি প্রশাসনিক বিষয় ছিল এবং সচিবালয় ও সিইসি-এর দ্বারা পরিচালিত হতো।
ইভিএমগুলো থার্ড জেনারেশনের হলেও তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ছিল অত্যন্ত দুর্বল, এবং দীর্ঘ সময় ধরে অযত্নে পড়ে ছিল মেশিনগুলো। প্রকল্পের পরিচালক নির্বাচনের ওয়্যারহাউজ তৈরি করার জন্য নির্বাচন সচিবকে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছিলেন, কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ইভিএমের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমদ জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ইভিএম প্রকল্পের দুটি উদ্দেশ্য ছিল—একটি ছিল রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন, আরেকটি ছিল এর মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশঙ্কা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইভিএম কেনার উদ্দেশ্য এবং জনগণের টাকার সঠিক ব্যবহার নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।